ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিনে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। বরাবরের মতো এবারও ঘরমুখো মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কের ধারে কোরবানির পশুর হাট তো আছেই, এবার যুক্ত হয়েছে ফেরি সংকট। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় বড় ফেরি চলাচল করতে পারছে না। অন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে তীব্র ¯্রােতের কারণে ফেরি চলছে ধীরগতিতে। ফলে উভয় ঘাটের দুই পারে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ঈদুল আজহায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা এ সময় বেড়ে যায়। কয়েক বছর ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চার লেন প্রকল্পের আওতায় ২৩টি নতুন সেতু খুলে দেওয়ার পর এই মহাসড়ক এবার আগের চেয়ে অনেক স্বস্তিদায়ক। তার পরও ঈদ যাত্রার প্রথম দুই দিনেই বিভিন্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার যানজট ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যানজট ছিল। মহাসড়কের বিড়ম্বনা এড়াতে ঈদ যাত্রীদের একটি বড় অংশ ট্রেন বেছে নিলেও এখানেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে প্রায় সব কয়টি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। ফলে স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৬-১৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যাঁরা টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের ট্রেনও ছেড়েছে ঘণ্টাখানেক পর। ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে। মহাসড়কে যাতে কোনোভাবেই যানজট সৃষ্টি হতে না পারে, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে। নির্দিষ্ট স্টপেজের বাইরে মহাসড়কে যাতে কোনো যানবাহন, বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস থামতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পুলিশ তৎপর হলে কোথাও যানজট সৃষ্টি হবে না। অন্যদিকে সব ট্রেন যেন ঠিক সময়ে ছেড়ে যায়, সে জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতি ঈদেই বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বগির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সময়মতো ট্রেন ছেড়ে না গেলে যাত্রীদের ভোগান্তির একশেষ হয়। ফেরিঘাটের দিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। নাব্যতা সংকট ও তীব্র ¯্রােতের কারণে প্রতিটি ফেরির ট্রিপের সংখ্যা কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে বড় ফেরি এনে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ছোট ফেরি সংযোজন করলে ঘাটের চাপ কমতে পারে। অন্যথায় যাত্রীদের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামান্য তৎপরতা ঈদে ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনা কমিয়ে দিতে পারে। তাতে আনন্দদায়ক হবে ঈদ যাত্রা। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। স্বস্তিদায়ক ঈদ যাত্রা আমাদের প্রত্যাশা।